
মহা যন্ত্রনা। সকাল থেকে আজ দুটোই ঝামেলা শুরু করেছে। এমনিতেই আরীব ইদানিং খুবই কোওপারেটিভ হয়েছে। আজ ব্যতিক্রম, প্যান্ট আর স্যান্ডো গেঞ্জী পরে বসে আছে। জামা পরবে না। তারাজের ডায়াপার চেঞ্জ করতে গিয়ে ডায়াপার খুলতে পেরেছি, পরবে না। হাত দিয়ে তার দামী “জিনিস” ধরে বসে আছে। টায়ার্ড হয়ে গেছি। বোধহয় ডায়াবেটিস বেড়েছে। যেই বয়সে নাতী-নাতনীদের বন্ধু বান্ধবীদের সাথে ফ্লার্ট করার কথা কথা, সেই বয়সে ছেলের ডায়াপার বদলাচ্ছি। আজ হুমায়ুন আহমেদ বেঁচে থাকলে ধিক্কার দিতেন আমাকে, নিজেকেও। অনেক চেষ্টার পর দুজনকেই কনভিন্স করতে পারলাম।আরীবকে প্রমিজ করলাম স্কুল শেষে আমি তাকে গাড়ি দিয়ে পিক করবো। তারাজ অজ্ঞাতে কারনে কোন কমিটমেন্ট ছাড়াই ডায়াপার পরেছে, তবে হাত ডায়াপারের ভিতরে। ধরে আছে, এখনো। মেজাজ চরম লেভেলে। সব রাগ গিয়ে পড়লো জাবিনের চাকুরীর ওপর। এই চাকুরির আগে লাইফটা কি মজারই না ছিলো। প্রতি সকালে ট্রেনে চাপতাম তারপর “আইকা”-খোরের মতো টানা সাইত্রিশ মিনিট ঝিমানো। আহ, কি লাইফ ছিলো। তার মাঝখানে কিভাবে জানি এই চাকুরি হয়ে গেল, আর আমার সুখের দফারফা। তার চাকুরি ক্যারোলিনস্কাতে। এটা ইউরোপের টপ তিনটা মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির একটা, সেটার ক্যান্সার রিসার্চ ল্যাবে চাকুরি। হেলাফেলা করা যায় না, ফেলাও যায় না।
যুদ্ধ শেষে বিজয়ী বেশে বিধ্বস্ত হয়ে বাসা থেকে বের হলাম। দুজনকে স্কুলে দিয়ে অফিসে যাব। পার্কিং স্পেসে নেমেই স্বর্নকেশী নীলনয়নার দাঁত বের করা হাই পেয়ে মনের ক্লান্তি পুরাই চলে গেল। বাচ্চা দেখে সে তার গাড়ি থামিয়ে বসে আছে। গাড়িটা সুন্দর, কমিঊনের ঘাস কাটার গাড়ি। সে আমাদের এলাকার লনের ঘাস কাটছে। আবারো দীর্ঘস্বাস ফেললাম, ভুল দেশে জন্মাইছে। আমাদের দেশে জন্মাইলে আজ বুগাতি-মার্সিডিস চালাতো। কম করে হলেও আমেরিকা গিয়ে সাকিব খানের তিন বা চার নম্বর বাচ্চার মা হইতে পারতো। যাকগে কপাল খারাপ।
ঝামেলা ছাড়াই দুজনকে গাড়িতে পুরতে পারলাম। আরীবকে স্কুলে দিয়ে তারাজের স্কুলের কাছাকাছি যেতেই খেয়াল করলাম গাড়ীর সাউন্ড সিস্টেম থেকে হালকা “ঝুমে জো পাঠান” বাজছে। এই গান আমি শুনি না। ওহ না, আসছে বাইরে থেকে লাউড স্পিকারে। আজ রোদ উঠেছে। প্রি-স্কুলের সব বাচ্চাদের এক্টিভিটি সকাল থেকেই বাইরের প্লেগ্রাঊন্ডে। আরবি, ফার্সি, আফ্রো, এ্যাংলো, ইন্দো-পাকিস্থানী বাচ্চার একটা দল শাহরুখ খানের গানের সাথে ফুটস্টেপ মিলাচ্ছে। তারাজ গাড়ি থেকে নেমে তাদের সাথে পা মিলিয়ে দিল।
জাবিন এখানে নাই। থাকলে কেঁদে দিত নির্ঘাত। সুইডেনের স্কুলে হিন্দি গান? আর তার ছেলে তার সাথে পা মেলাচ্ছে।
অর্স্তাবারী ষ্টেশনে চলে এসেছি। নামতে হবে।